Genealogy – বংশ পরিচয় ও এলাকার পরিচয়

বংশ পরিচয় ও এলাকার পরিচয়

প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ অতিবাহিত হয়ে আধুনিক যুগে মানুষের পদার্পন। যুগে যুগে মানুষ নামের সাথে অনেক উপাধি ব্যবহার করেছে, প্রত্যেক ব্যক্তি একটি উপাধি নামের পূর্বে বা পরে ব্যবহার করেন। কেউ কেউ বংশানুক্রমে ব্যবহার করেন । কেউ কেউ নতুন করে যুক্ত করেন তাদের পরিবারের মা বা দাদীর বংশ পরিচয় এর মাধ্যমে। কেউ আবার সুনাম বৃদ্ধি করার জন্য নিজের ইচ্ছামত উপাধি ব্যবহার করেন। নিম্নে কয়েকটি বংশ পরিচয় এর বিস্তারিত আলোচনা করা হল।  তথ্য সংগ্রহঃ বিভিন্ন ইসলামিক ইতিহাস, ব্রিটিশ আমলের বই, আরব দেশের ইতিহাস ও নিজ পরিবার থেকে নেয়া হয়েছে।

মির বংশ

মির একটি বংশ। মির একটি সম্মানের পদ মর্যাদা। পার্শিয়ান ও কুর্দিশ ভাষায় মির, শব্দ “এরাবিক উপাধি আমির” থেকে এসেছে। আমির যার অর্থ অভিজাত, প্রধান ও রাজকীয়।  মির শব্দের বহুবচন মিরান। পার্শিয়ান হচ্ছে ইরানের একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্টী। কুর্দিশ ও হচ্ছে ইরানের একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্টী।  তুর্কি দেশের দক্ষিণ পূর্ব অংশে, ইরানের উত্তর পশ্চিম অংশে, ইরাকের উত্তর অংশে এবং সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে কুর্দিশ জাতীর বসবাস।    তথ্য মতে ধারনা করা হয়, মির বংশ এর উৎপত্তি ইরানে বা  সৌদি আরবে । পার্শিয়ান সুন্নি সৈয়দ বংশের রাজকীয় জাত। মির হচ্ছে পূর্বের সৈয়দ জাতির পার্শিয়ান অংশ। পার্শিয়ান মির-দের ইরান দেশে এদের উদাহরণঃ মির সৈয়দ আলী হামাদানী, মির সৈয়দ হাসান বিন আজিমুল্লাহ, তাহসিন সৈয়দ বেগ ও হাজিম বিন তাহসিন সৈয়দ। 

সৈয়দ বংশ

সৈয়দ শব্দের অভিধানিক অর্থ শিক্ষক ও মালিক।  সৈয়দ হচ্ছে ইসলামিক নেতা বা প্রধান। বংশ পরিচয়ের জন্য সৈয়দ উপাধি ব্যবহার করা হয়। আরব বিশ্বে সৈয়দ উপাধি দিয়ে বুঝানো হচ্ছে আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর বংশধর। একজন সৈয়দ হচ্ছে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল – হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর বংশধর। আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর সাথে রক্তের সংযুক্তি থাকার কারনে ইসলামে এই উপাধিধারী ব্যক্তি বিশেষ স্থান লাভ করেন। সৈয়দ ব্যক্তিরা হচ্ছেন হযরত আলী ও ফাতিমা (রাঃ) এর বংশধর। ফাতিমা (রাঃ) এর কারনে ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেন সৈয়দ উপাধিতে সম্মানিত। এবং তাদের থেকে সৈয়দ উপাধি লাভ হয়। যাইহোক, অনেক লোক সৈয়দ বংশের লোক ব্যতীত, মিথ্যা –  সৈয়দ উপাধি ব্যবহার করে তাদের নামের সাথে ব্যবহার করেন সুনাম লাভের জন্য।  সৈয়দ বংশের ব্যক্তি যাকাত গ্রহন করতে পারবে না। এবং অন্য কেউ তাদের যাকাত দিতে পারবে না।

কালাপুর গ্রামে (মির বাড়ী)

কালাপুর গ্রামের ইতিহাস। কালাপুর একটি বড় গ্রাম। এর নাম করন করা হয়েছে প্রায় ১৪শ শতাব্দিতে। তখন হিন্দু সম্প্রদায় ছিল অত্যাধিক। সে সময়ে একজন রাজা ছিলেন – কালা রাজা নামে। এই রাজার নাম ছিল কালা, তাই তার নামানুসারে গ্রামের নাম  কালাপুর করা হয়েছিল।  রাজার প্রাসাদ ছিল গ্রামের পূর্বে, বর্তমানে এই জায়গায় আনান প্যাক কোম্পানি অবস্থিত। অনেক বিজ্ঞ লোকের জন্মস্থান এই কালাপুর।  কালাপুরের সম্মান অর্জনের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞলোকেরা প্রতিষ্টা করেন কালাপুর ইউনিয়ন ও কালাপুর সরকারী হাসপাতাল। প্রথমে এই প্রতিষ্টানগুলো কালাপুরে গ্রামে অবস্থিত থাকলেও পরবর্তিতে ভৈরব বাজার সংলগ্ন মুসলিম সম্প্রদায়ের সমর্থনে কালাপুর ইউনিয়ন ও কালাপুর হাসপাতাল স্থানান্তরিত করা হয়।

মির বাড়ী

তথ্যমতে জানা যায় যে, কালাপুর গ্রামের মির বংশের পূর্ব পুরুষ আরব দেশ থেকে ভারত বর্ষে আগমন করেন। এর পর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামে বসতি করেন ক্ষনিক সময়ের জন্য। তারপর কালাপুর গ্রামে আসেন। কালাপুরের পুরাতন মসজিদ এর দক্ষিণ রাস্তার দক্ষিণ পশ্চিম অংশে (এরশাদ মিয়ার বাড়ীর পূর্বে) সাময়িক সময়ের জন্য বসবাস করেন। কিছুদিন পর একটি হিন্দু বাড়ি ক্রয় করে তাদের স্থায়ী বসতি শুরু করেন। মির বংশের বসতির কারনে এই হিন্দু বাড়ি বর্তমানে মির বাড়ি হিসাবে পরিচিত। তাদের পরিবারে ছিল সাত ভাই এক বোন। সাত ভাই দুনিয়ার প্রতি আসক্ত ছিলেন না। ধর্ম ও এবাদতে মশগুল ছিলেন। আধ্যাত্মিক জীবনে সাত ভাই নিমগ্ন থাকায় নিজের প্রচুর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করায় অমনোযোগী ছিলেন এবং বোন দুনিয়াবিতে চালাক ও বুদ্ধিমান ছিলেন। মির বাড়ীর পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণে তাদের অনেক ভূমি ছিল।  এর কয়েক বছর পর, সাতগাঁও থেকে একজন কাজী এসেছিলেন মির বাড়ীতে।

এই কাজীর নাম ছফেদ উল্লা কাজী। অনেকদিন এই বাড়ীতে  থাকার পর, এই কাজীর কাছে সাত ভাইয়ের এক মাত্র বোন বিয়ে দেন। বোন ও ছফেত উল্লা কাজী বুদ্দিমান থাকার কারনে, যখন দেখেন ভাইয়েরা সম্পতি পরিচালনার খেয়াল নেই, তাই  বোন বেশির ভাগ সম্পত্তি নিজের নামে করেন ভাইদের অজান্তে । তখন ছফেত উল্লা কাজীর বসতি করার কারনে উনার বাড়ীর নাম কাজী বাড়ী হয়। মির বংশের সম্পত্তি দিয়ে ছফেদ উল্লা কাজী প্রচুর ধনবান হন।  এই খবর জানার পর কয়েক জন ভাই মিরপুর এলাকায় চলে যান। জনমত রয়েছে যে দুই ভাই আওলিয়া হিসেবে পরিচিত। তাদের কবরস্থান কাজী বাড়ীর পুকুর এর দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে অবস্থিত।

অবশিষ্ট এক জন ভাই সৈয়দ আছকর আলী স্থায়ী ভাবে মির বাড়ীতে বসবাস করেন। এখানেই তার সংসারী বাকী জিবন অতিবাহিত করেন। উনার সংসারে এক ছেলে সৈয়দ আব্বাছ আলী। আব্বাছ আলীর দুই ছেলে- (১) সৈয়দ চেরাগ আলী (২) সৈয়দ রওশন আলী। এই মির বংশ পরবর্তীতে প্রচুর ভুমি সম্পত্তি ক্রয় করেন। কালাপুর গ্রামের পশ্চিমে নিজ উদ্যোগে মির বংশের নামে মির নগর নামে একটি গ্রাম প্রতিষ্টা করেন। তাদের ভূমিতে বসবাস-রত পরিবার থেকে খাজনা আদায় করতেন। 

সৈয়দ চেরাগ আলীর তিন ছেলে-  (১) সৈয়দ মুহিবুল হোসেন- মোস্তফা, (২) সৈয়দ মুজিবুল হোসেন- আতা, (৩) সৈয়দ মুক্তা হোসেন।

সৈয়দ মুহিবুল হোসেন হোসেন এর তিন ছেলে- (১) মুস্তাক (২) মুরাদ (৩) মঞ্জুর ।

সৈয়দ রওশন আলীর দুই ছেলে- (১) সৈয়দ রফিকুজ্জামান- দৌলত (২) সৈয়দ রুকুনুজ্জামান- কুটি।

সৈয়দ রফিকুজ্জামান এর এক ছেলে- (১) সৈয়দ রিফাত জামান- রেজবী।    

Please SHARE this to others - Click Icon